না বলা ভালবাসা :
তেমন মধুর কোন স্রীতি ছিলনা মুরাদ আর রাফীর মধ্যে।শুধুমাত্রএকটি বার চোখ চাওয়া চাওয়ি করা ছাড়া। সেই চোখা চোখির সময় রাফীর মনে কোন প্রতিক্রিয়া হয়েছিল কি না মুরাদ তা জানে না,শুধু জানে তার নিজের মনে কেউ একজন ভালবাসার আবাস গড়ল সারাজীবনের জন্য।
সে দিনের পর থেকে আর দেখা হয়নি রাফীর সাথে।তবুও মনে মনে খুজে ফিরছিল মুরাদ রাফী নামের মায়াবতী কোমলমতী এক সুন্দর গ্রাম্য মেয়ের মুখ। মুরাদ তখনও জানে না রাফী মেয়েটি তার জীবনের জন্য কি বার্তা নিয়ে আসছে। এ দিকে মুরাদ রাফী কে নিয়ে সুখেরসপ্ন দেখা শুরু করেছে।
কিছুদিন পর মুরাদ তাদের বাড়ির উঠোনে একটি অপরিচীত মেয়ের অবয়ব আবিষ্কার করল।মুখটা তখনও অস্পষ্ট।তবে কেন জানি মুরাদের মনে হচ্ছিল এই মেয়েটিই সেই মেয়ে। মুরাদ বুঝতে পারে না মেয়েটার প্রতি তার কেন এত আকর্ষন?কিসেরই বা আকর্ষন? এর আগে মুরাদ কোন মেয়েকে এমন ভাবে ভাবেনি!
মুরাদ ভাবতে থাকে 'এটাই বুঝি ভালবাসা'। মেয়েটা যখন ঘুরে দাড়াল মুরাদ চমকে উঠল।এই মেয়েটাই তো সেই মেয়ে! মুরাদ তার ছোট বোন ইলার সাথে রাফীর কিছুটা ঘনিষ্টতা লক্ষ্য করল। ইলার কাছ থেকেই রাফী নামটা জানতেপারল মুরাদ।আরো জানল মেয়েটার বাড়ী রংপুর।এখানে ব্রিত্তী পরীক্ষা দেয়ার জন্য কোন এক আত্বীয়ের বাসায় আছে।
মুরাদ ভাবে ভালবাসার কথাটা রাফী কে বলবে। কিন্তু কিসের যেন এক অদ্রীশ্য দেয়াল এসে তাতে বাধা দেয়। মানুষের না পাওয়া গুলো যখনই পাওয়ায় রুপান্তরীত হতে চায় তখনই কিছু না কিছু এসে তাতে কাঁটাতার হয়ে বাঁধা দেয়।
মুরাদ বরাবরই ভাল ছেলে।গ্রামের সবাই ওকে খুব নম্র,ভদ্র ছেলে হিসেবে জানে। মূল বাধাটা এখানেই। মুরাদ চায়নি তার নামে কোন খারাপ ঘটনা বা কাহীনি রটুক গ্রামে।ও চেয়েছিল ধীরে ধীরে রাফীকে ও ওর অভীভাবক কে কথাটা জানাতে। কিন্তু ও হয়ত একটু বেশী দেরী করেফেলেছিল!
কেটে গেল ৫ টি বছর- মুরাদ তখনও তার ভালবাসার কথা বলতে পারেনি রাফীকে। মুরাদের ভালবাসার মাঝে বাধা হয়ে দাড়াল তারই এক বন্ধু আবির!যে কিনা নিজেও ভালবাসত রাফীকে। মুরাদ তখনও তা জানত না।রাফীর কারনে বন্ধুত্ব নষ্ট হওয়ার আগ মহূর্তটি পর্যন্ত তারা একে অপরে ছিল খুব ভাল বন্ধু! অবশ্য মুরাদ নিজেই এ বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিন্ন করেছে আবির ও রাফীর ভালর জন্য।
মুরাদ দেখল রাফী ও আবির একে অপরকে খুব ভালবাসে। এখন যদি সে রাফীকে তার ভালবাসার কথা বলে তবে তিনটি জীবনের জন্য তা বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।একথা ভেবেই মুরাদ আবির-রাফীর জীবন থেকে আস্তে আস্তে সরে যেতে থাকে।মুরাদ মনে মনে রাফীকে ভুলতে চেষ্টা করতো। কিন্তু সে দেখল তার পক্ষে রাফীকেএত সহজে ভোলা সম্ভব না।যদিও রাফীর বাড়ি রংপুর এখান থেকে ৪৫ কিমিঃ দূরে।তবুও আবিরকে দেখলে মনে পড়ে যায় রাফী নামের সেই মেয়েটির মুখ।
তাই রাফীকে ভোলার জন্য মুরাদ ঠিককরল সে আবিরের সাথে কোন সংশ্রব রাখবে না।যদিও এটা তার জন্য খুবইকষ্টকর হয়ে দাড়াবে। তবুও চেষ্টা করতে তো দোষ নেই।যে ভাবেই হোক রাফীকে তো তাকে ভুলতেইহবে। ইচ্ছে করেই আবিরের সাথে ঝগড়া বাধালো মুরাদ।মুরাদ বলে উঠল"আমার সাথে আর তুই দেখা করবি না আর কথা বলার কোন রকম চেষ্টা করবিনা"।মুরাদের মুখে এমন কথা শুনে আবির বেশ অবাক হল।
এভাবে নানা রকম তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব তৈরী করতে থাকে মুরাদ। কেটে গেল দুটি বছর! মুরাদ এখনো ভালবাসে রাফীকে। আর মাঝে মাঝে নিজে নিজেই হাসে এইভেবে যে, হায়রে ভালবাসা!
যাকে ভালবাসি সেই জানে না তাকে ভালবাসি!আর সে কোনদিনও জানতে পারবে না যে মুরাদ নামের কোন এক পাগল কিশোর ভালবেসেছিল তাকে!হয়ত এখনো তাকে ভালবেসে চেয়ে আছে ফিরেআসা পথটির দিকে নিষ্পলক দুটি আঁখি মেলে! মুরাদ এখন আর ভাবে না রাফীর কথা,গাঁথে না রাফীকে নিয়ে কোন ভালবাসার মালা!গাথঁবেই বা কি করে?তার ভালবাসার চারাগাছটি তো অনেক আগেই মরে গেছে!কোন এক শীতে হয়ত ঝড়ে গেছে গাছটির কঁচি পাতা গুলো!
তার পর আর সেই গাছটির জন্য আসেনিকোন বসন্ত!লাগেনি ফাল্গুনের সপ্নীল ছোয়া! এত কিছুর পরও যখন অন্ধকার রাতে তারা ঝলমল আকাশে রুপোর থালার মত চাঁদ নামের উপগ্রহটি উঁকি দেয় ধরার বুকে! মুরাদের তখন চাঁদটিকে মনে হয় তাররাফী!দূর থেকে দেখছে তার একা একাপথ চলা!
এতেই শেষ নয়! সামনের জীবনে রাফীকে ভালবাসার কতটুকু মূল্য কিভাবে দিতে হবে মুরাদকে তা সে নিজেই জানে না। আপনাদের কাছে প্রশ্ন, রাফী কি কোন দিনই বুঝতে পারবে নামুরাদের এই না বলা ভালবাসাকে.......? ।।।।কাজী সোহেল